বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন
তুহিন আহামেদ, সাভার থেকে:: আলিফ আহম্মদ সিয়াম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক শহীদ। সিয়াম সাভারের ডেইরী ফার্ম হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিল। বাবা-মায়ের সাথে থাকতেন আশুলিয়ার ইসলামনগরে। কোটা আন্দোলন শুরু হলে তিনি ১৫ জুলাই প্রথম যোগদান করেন এবং ৫ আগস্ট মাথায় গুলি লেগে গুরুতর আহত হন এবং ৭ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সিয়ামের লাশ বাগেরহাটে তাদের গ্রামের বাড়িতেই দাফন করা হয়েছে।
সম্প্রতি আলিফ আহম্মদ সিয়ামের বাড়িতে গিয়ে এই প্রতিবেদক সিয়ামের বাবা-মা, ছোট বোন ও তার বন্ধুদের সাথে কথা বলে।
আলিফ আহম্মদ সিয়াম (১৬) গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট সদর থানাধীন বড় বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বুলবুল কবির ও মাতা তানিয়া আক্তার দম্পতির একমাত্র ছেলে। ঢাকার আশুলিয়ার ইসলামনগরে জনৈক জুয়েলের বাড়িতে ভাড়াবাসায় থেকে ডেইরী ফার্ম হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল এবং ২০২৫ এর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
শহীদ সিয়ামের মা তানিয়া আক্তার জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলেই সিয়াম বাসায় ছটফট করতো। আন্দোলন যখন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তখন ১৫ জুলাই জাহাঙ্গীরনগরের সামনে আন্দোলনে প্রথম যোগ দেয় সিয়াম। তার বাবাও ঘরে বসে থাকেনি। তিনিও ছেলের সাথে আন্দোলনে নিয়মিত যোগ দেয়। সিয়াম প্রত্যেকদিন অংশ নেন আন্দোলনে। এরপর ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের আব্দুল্লাহ হিল কাফির নেতৃত্বে টিয়ারশেল ও অতর্কিত গুলি চালায় পুলিশ। সেদিন সিয়াম টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়। পরে আহত অবস্থায় বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে এসেও ছটফট করতে থাকে সিয়াম। তাকে বার বার নিষেধ করলেও আন্দোলন থেকে ফেরানো যায়নি। আহত অবস্থায় পরেরদিন থেকে পুনরায় আন্দোলনে যোগ দেয় সে।
বিচার দেখে যেতে চান শহীদ সিয়ামের বাবা-মা
তাঁর মা তানিয়া আরো জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যখন “লং মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচি ঘোষণা আসে সিয়াম ৫ আগস্ট বেলা ১১ টার দিকে সেই কর্মসূচি পালনে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আন্দোলন করতে করতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে সাভার থানা স্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজের নীচে পৌছলে আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। পরে একটি বুলেট এসে লাগে সিয়ামের মাথায়। গুলিবিদ্ধ সিয়ামকে আন্দোলনকারীরা উদ্ধার করে স্থানীয় ল্যাব জোন হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৭ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মারা যায় সিয়াম।
শহীদ সিয়ামের মা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, “আমার ছেলে বড় হয়ে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখত। পাইলট হয়ে আমাদের নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবে। বাবা-মাকে হজ্ব করাবে। কিন্তু হাসিনা সরকারের নিষ্ঠুরতায় আমার ছেলে শহীদ হল। আমরাতো টাকা পয়সা চাই না, আমারা শুধু বুচার চাই। যাদের কারণে শহীদ হলো তাদের বিচারতো এখনো হলো না। হবে কিনা তাও জানি না। তবে আমার ছেলে সহ সকল শহীদদের বিচার চাই। আমরা বেঁচে থাকতেই যেন এর বিচার করা হয়। তবে বর্তমান সরকারের কাছে তিনি জোড় দাবী জানান জুলাই সনদ এবং বিচার কার্য সম্পাদন করার জন্য। তারা যেন বিচার দেখে যেতে পারে।
বিচার দেখে যেতে চান শহীদ সিয়ামের বাবা-মা
শহীদ সিয়ামের ছোট বোন ইসরাত জাহান লামহা জানান, ভাইয়া প্রতিদিন আমাকে প্রাইভেটে নিয়ে যেত-নিয়ে আসতো। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না ভাইয়া নেই। আমার ভাইয়ার জন্য দোয়া করবেন বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
দিয়ামের বন্ধু সামিউল, মনি, মুক্তা, ফাহাদ জানান, “গেল বৃহস্পতিবার আমাদের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে। আমরা ভাল রেজাল্ট করেছি। কিন্তু সিয়ামেরও এবার রেজাল্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিয়াম শহীদ হয়েছে। আমরা ওর হত্যার বিচার চাই।
শহীদ আলিফ আহম্মদ সিয়ামের বাবা বুলবুল কবীর বলেন, “আমরা শুধু সকল শহীদদের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই। সেই সাথে আমার ছেলে সহ আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে অথবা নিজ জেলায় বিভিন্ন স্থাপনা যেমন স্টেডিয়াম, সড়ক সহ স্কুল-কলেজের নামকরণ করা হয়। বিচার হলে হয়তো কিছুটা শান্তি পাবো আমরা।”